গত বছরের ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রচন্ড আঘাতে রেলিগেট ফেরিঘাট সংলগ্ন প্রায় ১৩০ বছরের পুরানো বটগাছটি গোড়া থেকে উপড়ে পড়ে সড়কের উপর। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে সড়কের উপর থেকে গাছপালা অপসারণে কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের দৌলতপুর এবং খুলনা সদরের ৪ টি ইউনিটের ৫০ জন কর্মী তাৎক্ষণিকভাবে ইলেকট্রিক করাত দিয়ে বৃহদাকৃতির বট গাছটি’র বড় বড় ডাল কেটে সড়কে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেয়। কিন্তু উপড়ে পড়া মূল গাছটি সড়কের পাশেই থেকে যায়। এরপর কেটে গেছে ৭ মাস। যেটি ওই স্থান থেকে অদ্যবধি অপসারণ করা হয়নি। বটগাছটি’র মূল অংশ সড়কের প্রায় অর্ধেকাংশ জায়গা দখল করে আছে। ফলশ্রুতিতে দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন চালকদের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে।
সড়কটি দিয়ে প্রতিনিয়ত নগরঘাট ফেরিঘাট থেকে রেলিগেট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনকারী ভ্যান চালক শাহ আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘অনেকদিন আগে সড়কের পাশের ওই বড় বটগাছটি ঝড়ে ফেলাই দিছিলো। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আইসে ডাল পালা কাটে রাস্তা পরিষ্কার করে দিছিলো। কিন্তু গাছ তারা ওই জাগা থেকে সরাইনি। রাস্তার পাশে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। রাস্তা দিয়ে প্যাসেঞ্জার নিয়ে আমরা আসা যাওয়া করি বেশ খানিকটা ঝুঁকি নিয়ে। বড় গাড়ি গাছের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে আর জাগা থাকে না। মাঝেমধ্যে অ্যাক্সিডেন্ট হয়। ৩/৪ মাস আগে একটা বড় এক্সিডেন্ট হইছে ওই গাছের সামনে। এক মোটরসাইকেল চালক মারাত্মক আহত হয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি তাড়াতাড়ি গাছটা সরাই নিক।’
একই সড়কের ভ্যানচালক জসিম বলেন, প্রত্যেকদিন এই রাস্তা দিয়ে অনেক গাড়ি আসা যাওয়া করে। রাস্তার পাশে এত বড় বট গাছের গুড়া পড়ে থাকার কারণে হঠাৎ করে দু’টো তিনটে গাড়ি একসঙ্গে ক্রস করার সময় সমস্যা হয়। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো অ্যাক্সিডেন্টও হয়। অনেক সময় ফেরিঘাটে ফেরি আসার অপেক্ষায় গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে। তখন আরো সমস্যা হয়।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় ১৩০ বছরের পুরানো বটগাছটি ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রচন্ড আঘাতে রাস্তার উপর উপড়ে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গাছের ডালপালা মেশিন দিয়ে দিয়ে কেটে পরিষ্কার করলেও এখনও পর্যন্ত আসল গাছটা ওই জায়গা থেকে সারাইনি। সেইথেকে রাস্তার পাশে ওইভাবে পড়ে আছে। রাস্তা দিয়ে গাড়ি আসা যাওয়া করে ঝুঁকি নিয়ে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি দ্রুত গাছটি অপসারণের ব্যবস্থা করা হোক।
গাছটি অপসারণের ব্যাপারে দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনকে বলেছি গাছটি দ্রুত অবসারণের জন্য। তারাও আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ।
এ ব্যাপারে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি শাখার স্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। বড় গাছ অপসারণের জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি প্রয়োজন সেগুলো আমাদের নেই। কিনতে গেলেও অনেক অর্থের প্রয়োজন। গাছটি অপসারণের ব্যাপারে আমরা ম্যানুয়ালি অনেকের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে গাছটি ভালোভাবে না শুকালে কাটতে অসুবিধা হবে। এ কারণে বিলম্ব হয়েছে।
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ইতিমধ্যে গাছটি অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একটি রেজুলেশন হয়েছে। ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। খরচের অনুমোদনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই গাছটি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো বলেন, রেমালের আঘাতে বট গাছটি উপড়ে সড়কের উপর পড়ার পর খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় গাছের ডাল কেটে অপসারণ করে সড়কে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে দেয়। ডালপালা অপসারণের সময় আমি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলাম।
খুলনা গেজেট/এইচ